বিনিয়োগকারীর বাজেট ভাবনাঃ ২০১৯-২০

Home » Market Analysis » বিনিয়োগকারীর বাজেট ভাবনাঃ ২০১৯-২০
June 30, 2019 by
বিনিয়োগকারীর বাজেট ভাবনাঃ ২০১৯-২০

অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট আজ জাতীয় সংসদে পাশ হল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ৪৮ তম বাজেট শুরু থেকেই পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল। ক্ষমতাশীল আওয়ামীলীগ সরকারের নতুন অর্থ মন্ত্রী জনাব আ হ ম মোস্তফা কামালের প্রথম বাজেট এটি। পুঁজিবাজারের জন্য অভূতপুর্ব  প্রণোদনা দেয়ার আগাম ঘোষণা থাকায় স্বভাবতই বিনিয়োগকারীগণ অধীর আগ্রহে বাজেট প্রস্তাবনা এবং এর বিভিন্ন সংশোধনী পরর্যবেক্ষন করেছেন। 

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাজেট থেকে পুঁজিবাজার যা পেল –

১. ডিভিডেন্ড আয়ে ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের কর শূন্য সীমা ২৫,০০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০,০০০ টাকায় নির্ধারণ।

২. সরকারী সঞ্চয় পত্রে মূলধনী মুনাফার উপর উৎসে ১০% কর আরোপ। যা পুর্বে ৫% ছিল।

৩. পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কোনো অর্থবছরে কর পরবর্তী নিট লাভের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইনড আর্নিংস,ফান্ড,রিজার্ভে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি এরূপ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রতিবছরে রিটেইনড আর্নিংস,ফান্ড,রিজার্ভের মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।

৪. পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করবে, কমপক্ষে তার সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করতে হবে। যদি কোম্পানির ঘোষিত স্টক লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে স্টক লভ্যাংশে উপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।

উল্লেখিত চারটি প্রস্তাবনার মধ্যে প্রথমটি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরাসরি প্রণোদনা। আর বাকি তিনটি হল নীতিগত সহায়তা,যার পরোক্ষ সুবিধা পুঁজিবাজার তথা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগণ পাবেন। অতিরিক্ত বোনাস স্টক বা রিটেইন আর্নিং এর ক্ষেত্রে ১০% টেক্স আরোপ মূলত এক ধরনের শাস্তি,প্রত্যক্ষ প্রণোদনা নয়। পুঁজিবাজারে বছরের পর বছর চলে আসা কিছু অশুভ রীতিনীতিকে দমন করে কোম্পানি গুলোকে বেশি বেশি ক্যাশ ডিভিডেন্ড দনে উৎসাহিত করাই এই ১০% টেক্স আরোপের মূল লক্ষ। 

প্রস্তাবিত নীতি সহায়তা সমূহ বাজারে নিম্নরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারেঃ

১. জুলাই ২০১৯ থেকে শুরু হয়েছে অনলাইনে সঞ্চয় পত্র বিক্রি। ১ লক্ষ বা তার অধিক মূল্যের সঞ্চয় পত্র কেনায় টিন সার্টিফিকেট বাদ্ধতামূলক করেন এবং সর্বশেষ সঞ্চয় পত্রে  মূলধনী মুনাফার উপর উৎসে ১০% কর আরোপ করে সরকার মূলত নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয় পত্র কেনায় কঠোর নজরদারি শুরু করেছে। ফলে সঞ্চয় পত্রে অতিরিক্ত বিনিয়োগ হওয়া অর্থের একটি অংশ পুঁজিবাজার অথবা ব্যাংক ব্যবস্থায় ফেরত আসবে।

২. ভাল মুনাফা করা সত্যেও নাম মাত্র ডিভিডেন্ড দিয়ে রিজার্রভ বড় করার কৌশল বাধাগ্রস্থ হবে। কোম্পানির নেট মুনাফার নূন্যতম ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড আকারে বিতরণ না করলে কোম্পানিগুলোকে রিটেইন আর্নিং এর উপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। তাই যে সকল কোম্পানির পে-আউট রেশিও ৩০ শতাংশের কম তারা চাপে পড়বে। আশা করা যায় এতে অনেক কম্পানি তাদের ডিভিডেন্ড পলিসি পরিবর্তন করে পে-আউট রেশিও ৩০ শতাংশে উন্নীত করবে।

৩. এক্সপানশন বা ব্যবসার চলতি মূলধনের প্রয়োজন না থাকা সত্যেও পুঁজিবাজারের বহু কোম্পানি অহেতুক স্টক ডিভিডেন্ড দেয়। ব্যবসায়িক এক্সপানশন না থাকায় এতে একদিকে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় কমে যায়। অন্য দিকে মূল্য সমন্বয়ের কারনে বিনিয়োগকারীগণ স্টক বোনাসের যথাযথ দাম পায় না। বিএসইসি ইতিমধ্যেই নোটিফিকেশন জারির মাধ্যমে এই অপ্রয়োজনীয় স্টক বোনাস দেয়ার সুযোগ সীমিত করেছে। পাশাপাশি বাজেটে স্টক বোনাসের সম পরিমান ক্যাশ বোনাস দেয়ার সুপারিশ করছে। যে সকল কোম্পানি স্টক বোনাসের সমপরিমান ক্যাশ দনে ব্যার্থ হবে তাদেরকে জরিমানা সরূপ স্টক বোনাসের উপর ১০ শতাংশ টেক্স আরোপ করা হয়েছে। এই নীতি সহায়তার আলোকে প্রত্যাশা করা যায় যে,পুঁজিবাজারে অহেতুক স্টক লভ্যাংশ দেয়ার কুঅভ্যাস ধীরে ধীরে কমে আসবে এবং বিনিয়োগকারীগণ ন্যায় সংগত স্টক ডিভিডেন্ডের সমপরিমান ক্যাশ বোনাস পাবেন। 

৪. বাজেটে প্রদত্ত নীতি সহায়তাগুলি পরর্যালোকনা করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে,সরকার চাইছে পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুল ডিভিডেন্ড হিসেবে স্টকের চাইতে ক্যাশ দেয়ায় অভ্যস্ত হোক। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীগণ বছর শেষে কোম্পানিগুলি থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান ক্যাশ গ্রহণ করার সুজোগ পাবে। ফলে ক্যাপিটাল গেইন নির্ভর পুঁজিবাজারে ডিভিডেন্ড গেইন থেকেও পরর্যাপ্ত আয় করার পথ উন্মুক্ত হবে।

৫. সাম্প্রতিক জারি করা বিএসইসির নোটিফিকেশন মোতাবেক ২% এর কম শেয়ারধারী  পরিচালকদের পদ স্বয়ক্রিয় ভাবে শূন্য ঘোষিত হবে। আবার সমষ্টিগত ভাবে যে সকল কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের ৩০% শেয়ার নেই তারা রিপিট আইপিও,রাইট শেয়ার অথবা স্টক বোনাস দিয়ে পেইড-আপ ক্যাপিটাল বাড়াতে পারবে না। এই সকল কোম্পানিকে অবধারিত ভাবে শুধু মাত্র ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে হবে। যেহেতু এই সকল কোম্পানির সিংহ ভাগ শেয়ার পাবলিক বা ইনস্টিটিউটের কাছে আছে,তাই ক্যাশ বোনাসের বড় অংশ পরিচালকগণের হাত ছাড়া হবে। ফল সরূপ আশা করা যায় যে, এই সকল কোম্পানির পরিচালকগণ এবং বাজারের অন্যান্য কোম্পানির পরিচালকগণ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের সিংহভাগ নিজেদের কাছে রাখার জন্য তারা তাদের শেয়ার হোল্ডিং বাড়াবেন। 

পরিশেষে বলা যায়, এবারের বাজেটে ক্ষুদ্রবিনিয়োগকারীদের আনন্দিত হওয়ার মত বেশ কিছু উপকরণ রয়েছে। বিগত বাজেটগুলর চাইতে এবারের বাজেটে অনেক বেশি নীতি সহায়তা পুঁজিবাজারকে দেয়া হয়েছে। ধীর্ঘ মেয়াদে এই নীতি সহায়তাগুলি পুঁজিবাজারে লভ্যাংশ বন্টনে আরো বেশি স্বচ্ছতা ও সুশাসন আনবে বলে আমি মনে করি। আমাদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির আশানরুপ মেলবন্ধনে দেশের পুঁজিবাজারের নব জাগরণ ঘটুক – এটাই সকল বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশা।           

[ccpw id="28"]
Login
All Categories
amarstock.com