শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেছেন অথচ PE Ratio এর নাম শোনেননি এমন উদাসীন বিনিয়োগকারী সম্ভবত এই ২০১৯ সালে খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেই আমার বিশ্বাস। কারন ১৯৯৬ ও ২০১০ এর মার্কেট ধস আমাদের বিনিয়োগকারীদের অনেক বেশী সচেতন ও শিক্ষিত করেছে। তবে এই শিক্ষায় ও আছে শুভঙ্করের ফাঁকি। শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের প্রাথমিক পাঠ নিতেই আমাদের অলসতা চলে আসে, নতুন কিছু জানার ও শেখার ইচ্ছা-প্রচেষ্টা কোন কিছুই আমরা বেশী দিন ধরে রাখি না। অথচ ট্রেড আওয়ার ছাড়া এক জন বিনিয়োগকারীর সবচেয়ে বেশী সময় কাটার কথা বিভিন্ন কোম্পানির প্রান্তিক প্রতিবেদন পড়ে, বিভিন্ন এনালাইসিস টেকনিক শিখে ও তাদের ব্যবহার অনুশীলন করে।
কোন কিছুর পেছনে লেগে না থাকলে সাফল্য আশা করা বোকামি। এটা বুদ্ধি ও কৌশলের বাজার, এখানে অন্যের চাইতে নিজেকে এগিয়ে রাখতে না পারলে মুনাফার দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই অহেতুক গুজবের পেছনে দৌড়ে আর ট্রেড-স্ক্রিনের দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থেকে বিশেষ কিছু অর্জিত হবে না। এগুল করে গড় পড়তা মুনাফা করা সম্ভব হলেও শেয়ার মার্কেটের সফলদের কাতারে নিজেকে তুলে আনতে পারবেন না। উপায় একটাই নিজেকে আরও শিক্ষিত ও যোগ্য করে তুলুন, নতুন নতুন এনালাইসিস ট্যাকনিক শিখুন ও চর্চা করুন।
দেশের মূল ধারার দৈনিক পত্রিকার অর্থনৈতিক পাতার রিপোর্টার, মার্কেট এনালিস্ট ও বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে অর্থনীতির শিক্ষক সবাই এক বাক্যে বলছেন – ‘ফান্ডামেন্টাল দেখে শেয়ার কিনুন। কোম্পানির আয় ও PE Ratio দেখে নিন। PE যত কম তত ভাল, ১৫-২০ এর উপর হলেই বিপদ।’ মানছি তারা আমাদের ভালোর জন্যই বিনা মূল্যে উপদেশ দিচ্ছেন। ‘PE ২০ এর নিচে হলেই নিরাপদ’ এই টোটকা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজ করলেও সব ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। পেরাসিটামল তিন বেলা খেলে ভাইরাল জ্বর ভাল হলেও টাইফয়েড সারবে না।
‘ভাল জিনিসের দাম বেশি আর সস্তার তিন অবস্থা’ এটা বহু পুড়ন কথা। আমাদের শেয়ার বাজারও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়। তাই কম পিই এর শেয়ার খোঁজার সাথে সাথে জানার চেষ্টা করুন ঐ শেয়ারের পিই কেন এত কম? আমাদের মার্কেটে কম পিই’র শেয়ার যেমন আছে তেমন অনেক বেশি পিই’র শেয়ার ও আছে। এদের সবগুলো ফান্ডামেন্টালি ভাল না হলেও বেশ কিছু কোম্পানি আছে যারা খুবই ভাল। কিন্তু উচ্চ দাম ও বেশি পিই’র শেয়ার বলে আমরা তাদের এড়িয়ে চলি।গ্রোথ কোম্পানি/গ্রোথ ষ্টক – এই টার্ম আমরা কম-বেশী সবাই শুনেছি। ধীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগে সর্বাধিক মুনাফা করার জন্য গ্রোথ ষ্টক আদর্শ। কিন্তু এ ধরনের শেয়ার কম দামে পাওয়া অসম্ভব। তাই কোন গ্রোথ স্টকটি বিনিয়োগযোগ্য আর কোনগুলো অতিমূল্যায়িত তা বুঝতে না পারলে আপনার গ্রোথ স্টকে বিনিয়োগ ব্যর্থ হতে পারে।
Year | EPS | Profit | Growth |
2010 | 12.73 | 2497.12 | 21% |
2011 | 12.3 | 3257.48 | 30% |
2012 | 9.76 | 3618.57 | 11% |
2013 | 8.56 | 4127.79 | 14% |
2014 | 8.92 | 4944.55 | 19% |
2015 | 10.8 | 5986.4 | 21% |
উপরের তথ্য আমাদের মার্কেটে ট্রেড হওয়া একটি কোম্পানি। ২০১০ থেকে ২০১৫ – এই পাঁচ বছর সময়য়ে কোম্পানিটি গড়ে ১৯% হারে বেরেছে এই কোম্পানির আয়। বছর বছর স্টক ও ক্যাশ মিলিয়ে ৩০-৪০% ডিভিডেন্ড দিয়েছে টাকার অংকে যা শেয়ার প্রতি ৩০-৩৫ টাকার সমান। খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই স্টকের দাম অনেক বেশি। ফলে পিই রেশিও থাকে ২৫-৩০ এর ঘরে। তাই ‘পিই রেশিও ২০ এর বেশি নয়’ – এই মন্ত্র এখানে অচল।
তা হলে আমরা কি ভাবে বুঝব ঐ কোম্পানিটি বিনিয়োগযোগ্য না কি অতিমূল্যায়িত? যেহেতু এটি একটি গ্রোথ কোম্পানি তাই এই স্টকের পিই রেশিও এর সাথে সাথে কোম্পানির Growth Rate ও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। আর এর জন্য আমাদের ব্যবহার করতে হবে PEG ও PEGY এই দুটি রেশিও
Price earning to growth ratio (PEG) = PE/ Growth Rate
Price earning to growth and Yield ratio (PEGY) = PE/ (Growth Rate + Yield)
Growth Rate = 100*((This Year’s profit – Last Year’s profit) / Last Year’s profit)
Yield = Dividend / Current Market Price
এই দুটি রেশিও এর মান ১ এর নিচে হলে (০.৫-০.৭ আদর্শ) আমরা অনায়াসে ঐ গ্রোথ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারি। আমাদের উদাহরণের কোম্পানিটির পিই রেশিও ২৫ থেকে ৩৫ এ ঘোরাফেরা করে, G – 20 ও Yield- 10
অর্থাৎ পিই যখন ২৫ তখন,
PEG = 25/20 = 1.25 আর PEGY = 25/(20+10) = 0.83
আর পিই যখন ৩০ তখন,
PEG = 30/20 = 1.5 আর PEGY = 30/(20+10) = 1
বুঝতেই পারছেন খুব ভাল কোম্পানি হওয়া সত্যেও এই কোম্পানির পিই রেশিও ২৫ বা তার আশে পাশে যত নিরাপদ ঠিক ততটাই ঝুঁকিপূর্ণ ৩০ অতিক্রম করলে। অতএব শুধু পিই রেশিও ২০ এর বেশি হলেই ভয় পাবেন না, কোম্পানিটির PEG ও PEGY Ratio হিসেব করে দেখুন, হয়ত বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় আপনি একটি Growth Stock পেয়েও যেতে পারেন।
well explained brother.. thank you
Many many thanks vai