বিনিয়োগকারীর পাঠশালা-৩ কেনার প্রস্তুতি

Home » Stock Analysis » বিনিয়োগকারীর পাঠশালা-৩ কেনার প্রস্তুতি
November 16, 2018 by
বিনিয়োগকারীর পাঠশালা-৩ কেনার প্রস্তুতি

২০০৭-৮ সালের এক জন নবীশ বিনিয়োগকারী হিসেবে স্বভাবতই আমার পুঁজির পরিমাণ ছিল কম। তাই চাইলেই সব কোম্পানির শেয়ার কেনার উপায় ছিল না। ঐ সময়ে ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য অন্যতম প্রতিবন্ধকতা ছিল লট প্রাথা। বিভিন্ন কোম্পানির লট সাইজ ছিল ভিন্ন ভিন্ন – দশ, বিশ, পঞ্চাশ থেকে শুরু করে একশ, পাঁচশ এমনকি এক হাজারটি ষ্টক নিয়ে ছিল একটি লট। আবার অধিকাংশ স্টকের ফেস ভ্যালু ছিল ১০০ টাকা। ফলে একটু ভাল মানের ষ্টক এক-দুই লট কিনতে গেলেই লাখ টাকার উপর গুনতে হত। সমস্যা এখানেই শেষ নয় – হাউজের ওপেন ফ্লোরে অর্ডার দেয়াও ছিল বিরক্তিকর কাজ। নতুন হিসেবে আমাদের স্থান এমনিতেই ছিল শেষের সারিতে, পেছনে দাঁড়িয়ে এক-দুই লট কেনার অর্ডার দিলে ট্রেডার ও সামনের বিনিয়োগকারীরা এমন ভাবে তাকিয়ে থাকত যেন মহা অন্যায় কাজ করে ফেলেছি পুঁজি বাজারে এসে। টুক-টাক কানাঘুষা ও শোনা যেন – ‘এমন মুরগীর আত্মা নিয়ে কী শেয়ার ব্যবসা হয়’ !

সব সমস্যার সমাধান হয়ে এসে ছিল ওভার দ্যা ফোন/ মোবাইলের এসেমেসে অর্ডার প্লেসিং ও ওয়েব-সাইট/ইমেইল ভিত্তিক অর্ডার প্লেসিং। এগুল শুরু হওয়ায় অল্প-অল্প করে শেয়ার কেনার পথ সুগম হয়ে ছিল। দশ বছর পর সুযোগ সুবিধা এখন অনেক বেড়েছে। হাউজে না গিয়ে মবাইল/কম্পিউটার থেকে সরাসরি অর্ডার দেয়া যাচ্ছে। বাজার থেকে লট প্রথা নামের আপদ বিদায় নিয়েছে। ছোট বড়, ভাল খারাপ নির্বিশেষে সব স্টকের ফেস ভ্যালু দশ টাকায় স্থির হয়েছে। চাইলে যে কেউ এখন একটি জিপি, বেটবিসি, স্কয়ারের শেয়ার কেনাবেচা করতে পারেন।

 

কি ভাবে কিনবেন ?

কেনার ক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগকারীগণ প্রথম যে ভুল করেন, তাল হল শুরুতেই এক ট্রেডে সব শেয়ার কিনে ফেলেন। ধরুন আপনি স্কয়ার ফার্মার ১০০০ টি শেয়ার কিনতে চান। সাধারনত আমরা এক ট্রেডেই সব শেয়ার কিনে ফেলি। এতে আমাদের লোকশানের ঝুকি অনেক অনেক বেরে যায়। বরং এক বারে সব শেয়ার না কিনে ৩-৪ ট্রেডে কিনুন। একটা কথা মাথায় রাখুন যে,আপনি কেনার পর পরই শেয়ারটির দাম পড়ে যেতে পারে। তাই ৩/৪ বারে কিনলে আপনার গড় ক্রয় মূল্য অন্যদের তুলনায় স্বাভাবিক ভাবেই কম হবে। অর্থাৎ শুরুতেই আপনি অন্যদের চাইতে এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন, যা আপনার মুনাফা অর্জনের জন্য সহায়ক।

প্রথম বার কেনার পর দুই তিন দিন অপেক্ষা করুন। অধিকাংশ সময় আপনি কেনা পর দাম কমবে। দাম ২/৩ শতাংশ কমলে দ্বিতীয় অংশ কিনুন। দাম আরও কমলে তৃতীয়/শেষ অংশ কিনুন। আর আপনি যদি খুবই ভাগ্যবান হন তবে প্রথম বার কেনার পরেই আপনি লাভে চলে যেতে পারেন। অপেক্ষা করুন -৩/৫ শতাংশ লাভে থাকলে বিক্রি করে মুনফা তুলে নিন। দাম কমে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসলে আবার নতুন করে কেনা শুরু করুন। এই স্ট্রটেজিকে বলা হয় এভারেজিং বাই টেকনিক। বিক্রির ক্ষেত্রেও একই ফরমূলা অনুসরণ করুন। সব শেয়ার একবারে বিক্রি না করে ২-৩ ধাপে বিক্রি করুন।

 

কতটুকু কিনবেন ?

এটা নির্ভর করে আপনার পোর্টফলিও এর ডিজাইন ও তার বর্তমান অবস্থার উপর। সহজ কথায়,সব মূলধন একটি কম্পানির স্টকে বিনিয়োগ নিরাপদ নয়। একই কারনে সব টাকা একটি সেক্টরের ৩/৪ টি শেয়ারে বিনিয়োগ করাও অনুচিত। নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য প্রথমেই ২-৩ টি সেক্টর বাছাই করুন। দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখা ও সরকারের প্রায়োরিটি দেয়া খাত গুল বিবেচনা করুন। এবার প্রতিটি সেক্টর থেকে ২-৩ টি কম্পানির শেয়ার আপনার পোর্টফলিওতে রাখুন। কারন সব ডিম এক খাচায় রাখলে একটি দুর্ঘটনাই আপনার সব কিছু নষ্ট করে দিতে পারে। তাই কখনই সব মূলধন একটি শেয়ারে বা একটি সেক্টরের শেয়ার সমূহে বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকুন। ইনশাল্লহ পরবর্তি লেখায় পোর্টফলিও ডিজাইন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছা রাখছি। আশা করি তা থেকে আপনারা উপকৃত হবেন।

 

নতুনদের জন্য টিপসঃ

  • এক ট্রেডেই সব ষ্টক কিনে ফেলা থেকে বিরত থাকুন। ক্রয় বিক্রয় উভয় ক্ষেত্রেই ধাপে ধাপে ২-৩ টি ট্রেডে কিনুন অথবা বেচুন।
  • দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখা ও সরকারের প্রায়োরিটি দেয়া সেক্টর গুল বিবেচনা করুন। ঐ সেক্টরের ভাল ভাল কোম্পানি গুল টার্গেট করুন।
  • সব পুঁজি একটি স্টকে অথবা একটি সেক্টরের ২/৩ টি স্টকে বিনিয়োগ করা এড়িয়ে চলুন।
[ccpw id="28"]
Login
All Categories
amarstock.com