চামড়া শিল্প কথনঃ by Mostofa Mahbub Ullah

Home » Stock Analysis » চামড়া শিল্প কথনঃ by Mostofa Mahbub Ullah
August 25, 2019 by

আমাদের দেশে সম্প্রতি শেষ হলো মুসলিম ধর্মের অন্যতম বড় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। পশু কোরবানির মাধ্যমে এই উৎসবটি পালিত হয়ে থাকে। তাই প্রতি বছর এই সময়ে চামড়া শিল্প পায় তার প্রধান কাঁচা মালের সবচেয়ে বড় সরবরাহ। বাংলাদেশের ইতিহাসে কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন মূল্য দেখা গেছে এবার। যা নিয়ে আলোচনা গিয়ে পৌঁছেছে সমালোচনায় এবং সমালোচনা আটকে গেছে পারস্পরিক দোষারোপের গণ্ডীতে। আর এই ধারাবাহিকতায় সমাধান উপেক্ষিত। অন্য অনেক বিষয়ের মতো মূল সমস্যা রয়ে গেছে অজানা।

আলোচনার এ পর্যায়ে একটু ঘুরে আসি অন্য দেশ থেকে। না, আমি কোন দূরের দেশে আপনাদের নিয়ে যাব না। নিকটতম দেশ ভারতের চামড়া শিল্পের কিছু তথ্য এখন তুলে ধরব। বিগত দুই থেকে তিন বছরে ভারতের উত্তর প্রদেশের ৫০০ চামড়া শিল্প কারখানার মধ্যে প্রায় ৪০০ টি বন্ধ হয়ে যায় রাজ্য সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণ কতৃপক্ষের চাপে। মাত্র ৪০টিরও কম কারখানা বর্তমানে চালু আছে। আর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এই সুযোগ লুফে নেয় বানতলায় অবস্থিত কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সকে নতুন মাত্রা দিতে। পূর্বের ২০২ একর জমির সাথে নতুন যুক্ত হওয়া ৭০ একর জমিতে বরাদ্দ দেয়া হয় ১৮৭টি কারখানাকে। থাকছে পৃথক লেদার গুডস পার্ক, ফুটওয়্যার পার্ক। ১০৯ কোটি রুপি ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে ৪টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা সিইটিপি। এর ফলে শিল্পনগরীর দূষিত জল পুনর্ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও আন্দুলগোড়িতে ৫১ একর জায়গার ওপর তৈরী হবে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট। যেখানে ছাঁট চামড়া পরিশোধন করে সার ও অন্যান্য জিনিস তৈরী করা যাবে। এখানে ৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮০,০০০ কোটি টাকার লগ্নি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বানতলা’র এই লেদার কমপ্লেক্স কে বলা হচ্ছে ‘মেগা লেদার ক্লাস্টার’ আর ব্যাপক কর্মসংস্থানের কারণে মূখ্যমন্ত্রী এর নাম দিয়েছেন ‘কর্মদিগন্ত’।

ফিরে আসি নিজ ভূমে। বলছিলাম, কাঁচা মালের অর্থাৎ কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় সরবরাহ মৌসুম নিয়ে। কিন্তু, কাঁচা মালের ব্যাপক সরবরাহের সুযোগ কাজে লাগাতে চাই আর্থিক সক্ষমতা। আমাদের ট্যানারি গুলো আর্থিক দৈণ্যতায় বিপর্যস্ত। এই দৈণ্যতা একদিনে তৈরি হয়নি। দৈণ্যতা এসেছে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, ধাপে ধাপে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি না করেই সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কারখানা মালিকদের বাধ্য করা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ৮ই এপ্রিল রাজধানীর হাজারীবাগের সব ট্যানারির বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শেষ করে পরিবেশ অধিদপ্তর। তারা ২২৪টি বিদ্যুৎ-সংযোগ, ৫৪টি গ্যাসের সংযোগ ও ১৯৩টি পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার যেই পরিবেশ দূষণকে কেন্দ্র করে সেদিন হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়, সাভারে নির্মিত চামড়া শিল্প নগরীতে সেদিনও চালু ছিল না সিইটিপি বা কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার। এপেক্স ও বে লেদারের মতো কারখানা সাভারে নিজস্ব ইটিপি তৈরির উদ্যোগ নেয় শুধুমাত্র ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার নিমিত্তে। যদিও তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। উভয় কারখানা সরকারের অনুমতি পেলেও বে লেদার বিসিকের অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয় অজানা কারণে। এবং এর ফলে তাদের বিদেশি পার্টনার চলে যায়। আর এপেক্স বিসিকের অনুমোদনও লাভ করে।

ব্যবসায়িক লোকসান, আর্থিক দূর্বলতা, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাহীন এক নগরীতে শিল্প কারখানা স্থানান্তর যেখানে নেই শ্রমিক আবাসনের ব্যবস্থা সব মিলিয়ে চামড়া শিল্প আজকের এই দূরাবস্থায়। কাঁচা মালের সহজলভ্যতা থাকা সত্ত্বেও তা কাজে লাগাতে পারছে না এই শিল্প। ফলে সরকার থেকে দেয়া হয়েছে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হয়ে বসে আছে অবকাঠামো, মূলধন আর উদ্যোক্তা নিয়ে। যার নেপথ্যে কাজ করেছে নিখুঁত পরিকল্পনা আর সফল বাস্তবায়ন। শুধু বাকি ছিল কাঁচা মালের সরবরাহ। কেননা, ধর্মীয় কারণে সেদেশে গো হত্যা নিষিদ্ধ। আমরা সেই কাঁচা মালের যোগানদাতা হিসেবে কাজ করে যাব। কারণ, নিকটতম দেশ হিসেবে আমাদের দেশের কাঁচা চামড়ার সহজ গন্তব্য হবে পশিমবঙ্গ, বাণিজ্যের হিসেব তাই বলে।

চামড়া শিল্প নিয়ে বাংলাদেশের ব্যর্থতা আর পশ্চিমবঙ্গের সফলতা’র নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করেছে নিখুঁত পরিকল্পনা আর সঠিক বাস্তবায়ন।

নদীর এপার ভাঙে ওপার গড়ে এই তো নদীর খেলা। আর সেই ভাঙ্গা পারেই আমাদের নিত্য বসবাস।

[ccpw id="28"]
Login
All Categories
amarstock.com